বিভিন্ন রোগের পথ্য (পাঠ ২)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৫) - গার্হস্থ্যবিজ্ঞান খাদ্য, পুষ্টি ও স্বাস্থ্য | - | NCTB BOOK
29
29

জ্বর ও ডেঙ্গু জ্বরে পথ্য- জ্বর নিজে কোনো রোগ নয় তবে সাধারণত কোনো ভাইরাস বা অন্য কোনো সংক্রমণের ফলে সৃষ্ট রোগলক্ষণ হিসেবে জ্বর হয়। জ্বরে দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এর সাথে মাথাব্যথা, মাথাধরা, অরুচি, বমি বমি ভাব ও বমি ইত্যাদি লক্ষণ থাকতে পারে। জ্বরে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায়, এছাড়া যথেষ্ট পরিমাণে শক্তির ক্ষয় হয়। তাই জ্বর হলে পানি ও শক্তির চাহিদা বেড়ে যায়। দীর্ঘদিন জ্বরে ভুগলে পানি ও শক্তির চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের চাহিদাও বেড়ে যায়। ডেঙ্গু জ্বর এডিস মশার মাধ্যমে সংক্রমিত ভাইরাসজনিত জ্বর। ডেঙ্গু জ্বর হলে দেহের তাপমাত্রা অনেক বেশি হতে পারে। যেকোনো জ্বরের মতো ডেঙ্গু জ্বরেও শরীরের জন্য পানি ও শক্তির চাহিদা বেড়ে যায়। সেই সাথে প্রোটিনের চাহিদা বৃদ্ধি পায় এবং বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ লবণের চাহিদা বাড়ে।

পথ্যের ধরন

  • উচ্চ শক্তিদায়ক, উচ্চ প্রোটিনযুক্ত, কম ফ্যাটযুক্ত খাবার দিতে হবে।
  • সব খাবারই খাওয়া যাবে। তবে হজমে সমস্যা হলে লঘুপাক খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। শরীরের তাপমাত্রা বেশি হলে অল্প আঁশযুক্ত খাদ্য নরম করে রান্না করে ভাত, খিচুড়ি বা পিশপাশ, নরম ও অল্প আঁশযুক্ত সবজি, আলু দেওয়া যায়। এছাড়াও নরম সুজি, পুডিং এবং কলা, পেঁপে, কমলা, আপেল ইত্যাদি দেওয়া যায়।
  • প্রোটিনের চাহিদা মেটানোর জন্য দুধ, ডিম, কম তেলযুক্ত মাছ, মুরগি ও ডাল দেওয়া যায়। ডেঙ্গু জ্বর হলে প্রোটিনের চাহিদা বেড়ে যায়।\]
  • যথেষ্ট পরিমাণে পানীয় যেমন-দুধ, শরবত, ফলের রস, ডাবের পানি, সুপ ইত্যাদি খেতে হবে।
  • টকজাতীয় ফল যেমন-আমলকী, লেবু, জাম্বুরা ইত্যাদি দিতে হবে।
  • জ্বর বেশি হলে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা পরপর অল্প অল্প করে খাবার দিতে হবে।

যে খাবার বাদ দেওয়া উচিত

  • মাখন, ঘি ও বেশি তৈলাক্ত খাদ্য।
  • ডিপ ফ্রায়ড খাবার যেমন- সিংগারা, সমুচা, চিকেন ফ্রাই ইত্যাদি।
  • অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার ও আঁশযুক্ত খাদ্য।
  • বেকারির খাবার যেমন- পেস্ট্রি, ক্রিম কেক ইত্যাদি।
  • সফট্ ড্রিংকস।

ডায়রিয়া ও আমাশয়ে পথ্য- খাবার ও পানির মাধ্যমে পরিপাকতন্ত্রে জীবাণুর সংক্রমণের ফলে ডায়রিয়া ও আমাশয় হয়ে থাকে। শিশুরাই আক্রান্ত হয় বেশি। তবে বড়রাও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। ডায়রিয়া হলে পাতলা মল নির্গত হয়, সাথে জ্বর, বমি বমি ভাব, পেটে ব্যথা ও বমি থাকতে পারে। যেহেতু এই রোগের কারণে পরিপাকতন্ত্র সরাসরি আক্রান্ত হয় ও পাতলা পায়খানার কারণে শরীর থেকে পানি ও লবণ বের হয়ে যায়, তাই পথ্য পরিকল্পনায় অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে। আমাশয় হলে নরম থেকে পাতলা মল নির্গত হয় এবং মলের সাথে মিউকাস এবং কখনো কখনো রক্ত নির্গত হয়। এক্ষেত্রে পেট কামড়ানোর মতো ব্যথা অনুভূত হয়।

পথ্যের ধরন

  • ডায়রিয়া হলে পাতলা পায়খানার কারণে শরীরে পানি ও লবণের ঘাটতি পূরণ করার জন্য প্রতিবার পায়খানার পর খাওয়ার স্যালাইন দিতে হবে। প্রয়োজনে চালের গুঁড়ার স্যালাইন রান্না করে খেতে দিতে হবে। এতে করে প্রয়োজনীয় পানি ও লবণের ঘাটতি খুব সহজেই পূরণ হবে। স্যালাইন না খেলে ডায়রিয়াজনিত কারণে ডিহাইড্রেশন হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
  • যেসব শিশু মায়ের দুধ খায় তারা কোনো অবস্থাতেই মায়ের দুধ খাওয়া বন্ধ করবে না, বরং মায়ের দুধের পাশাপাশি স্যালাইন চলবে।
  • ডায়রিয়া ও আমাশয়ের প্রকোপ খুব বেশি না হলে স্বাভাবিক খাবার খাওয়া যাবে এবং পাশাপাশি স্যালাইন ও ওষুধ খেতে হবে।
  • ডায়রিয়ার প্রকোপ খুব বেশি হলে অর্থাৎ তীব্র হলে স্বাভাবিক খাবার দেওয়া বাদ দিতে হবে এবং সেক্ষেত্রে অবশ্যই চালের গুঁড়ার স্যালাইন রান্না করে খেতে দিতে হবে। অন্যান্য খাবারের মধ্যে খুব নরম ভাত, ডিমের সাদা অংশ, কলা, ডাবের পানি দেওয়া যাবে।
  • কাঁচা কলা ও পাকা কলা আমাশয়ের ও ডায়রিয়ার রোগীর জন্য ঔষধি সবজি ও ফল হিসেবে পরিচিত। এগুলো আমাশয় ও ডায়রিয়ায় উপকারি ভূমিকা পালন করে। এছাড়া থানকুনির পাতায় আমাশয়ের রোগীর জন্য ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে।

ডায়রিয়ায় যে খাবার বাদ দেওয়া উচিত

  • এক্ষেত্রে দুধ, তৈলাক্ত খাদ্য, ডাল, বাদাম, খুব বেশি আঁশযুক্ত শাকসবজি ও ফল, এছাড়াও শুকনা ফল, মিষ্টি ও মসলাযুক্ত খাবার বাদ দিতে হবে।
  • সফট্ ড্রিংকস, ফলের ঘন রস।
  • ডিপ ফ্রায়েড খাবার যেমন- সিংগারা, সমুচা, চিকেন ফ্রাই ইত্যাদি।
  • বেকারির খাবার যেমন- পেস্ট্রি, ক্রিম কেক ইত্যাদি।
কাজ ১- কেউ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে সর্বপ্রথম তুমি কী খাওয়ার জন্য বলবে এবং কেন বলবে?
Content added By
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion
;